| |
               

মূল পাতা জাতীয় ‘মানসিক রোগে আক্রান্তদের প্রায় ৯২ ভাগ কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করেননি’


‘মানসিক রোগে আক্রান্তদের প্রায় ৯২ ভাগ কোনো চিকিৎসা গ্রহণ করেননি’


রহমত নিউজ ডেস্ক     10 October, 2023     03:18 PM    


জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা ও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার যৌথ গবেষণায় বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠীর শতকরা ১৮ ভাগ ও শিশু-কিশোরদের ১৩ ভাগ মানসিক রোগে আক্রান্ত। আক্রান্ত ব্যক্তিদের প্রায় ৯২ ভাগ কোনো ধরনের চিকিৎসা সেবা গ্রহণ করেননি। নগরায়ন, আর্থ সামাজিক অবস্থা, মানসিক চাপ, বংশগতি, অন্যান্য শরীরবৃত্তি ও মনোসামাজিক কারণ মানসিক রোগের প্রকোবৃদ্ধির অন্যতম কারণ। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক যৌথ গবেষণায় এই তথ্য উঠে আসে।

সোমবার (৯ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সাইক্রিয়াটিস্টসের (বিএপি) উদ্যোগে ও সাইনোভিয়া ফার্মার সহযোগিতায় ‘মানসিক স্বাস্থ্য সর্বজনীন মানবাধিকার’ শীর্ষক মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিএপির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক ডা. মো. তারিকুল আলম, প্রখ্যাত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক মোহিত কামাল, অধ্যাপক ডাক্তার এম এম এ সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. অভ্র দাশ ভৌমিক, সহযোগী অধ্যাপক ডা. হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার, ডা. ফারজানা রহমান ও সাইনোভিয়া ফার্মার জেনারেল ম্যানেজার (সেলস) এ কে এম রফিক।

বাংলাদেশে মানসিক রোগের প্রাদুর্ভাব সম্পর্কিত তথ্য তুলে ধরে  বক্তারা জানান, প্রাপ্তবয়স্ক জনগণের মাঝে মানসিক রোগে ১৮ দশমিক ৭ ভাগ, উদ্বেগাধিক্যে (জেনারালাইজড অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার) ৪ দশমিক ৭ ভাগ, বিষণ্ণতায় (ডিপ্রেসিভ ডিজঅর্ডার) ৬ দশমিক ৭ ভাগ, সোমাটিক সিমটম ডিজঅর্ডারে ২ দশমিক ৩ ভাগ, অবসেসিভ কমপালসিভ ডিজঅর্ডারে ০ দশমিক ৭ ভাগ, বাইপোলার ডিজঅর্ডারে ০ দশমিক ৫ ভাগ, সিজোফ্রেনিয়ায় ০ দশমিক ১ ভাগ মানুষ আক্রান্ত।এছাড়া শিশু-কিশোরের মাঝে মানসিক রোগে ১২ দশমিক ৬ ভাগ, শিশু-কিশোরের নিউরোডেভলপমেন্টাল ডিজঅর্ডারে ৫ দশমিক ১ ভাগ, শিশু-কিশোরের কনডাক্ট ডিজঅর্ডারে ১ দশমিক ৭ ভাগ, শিশু-কিশোরের মাঝে উদ্বেগাধিক্যে (জিএডি) ৪ দশমিক ৭ ভাগ আক্রান্ত।

অধ্যাপক মোহিত কামাল বলেন, আমাদের চেম্বারে এখন মায়েরা বেশি আসেন, তাদের সন্তানদের নিয়ে। এখন সন্তানেরা ইন্টারনেট এডেক্টিভ বিহেবিয়ার বা ইন্টারনেট ডিসঅর্ডারে আক্রান্ত। অভিভাবকরা বলেন সন্তানরা পড়াশোনা করে না, রাতে ঘুমায় না, তারা কথা শোনে না। আগে ব্রিলিয়ান্ট ছিল, এখন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। বাবা-মায়েরা নিজেদের কষ্ট লাঘব করার জন্য আমাদের কাছে নিয়ে আসে। আর বলে— আমার সন্তান আগে কত ভালো ছিল, এখন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। তো সেখান থেকে আমাদের অবজারভেশন কী? আমাদের অবজারভেশন হচ্ছে, বাচ্চারা যারা ইন্টারনেটে বসে থাকে, রাত জেগে থাকে ইন্টারনেট এডেক্টিভ বিহেবিয়ারে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের পড়ালেখায় ক্ষতি হচ্ছে। এটি একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা আমি মনে করছি। আকাশসীমা যদি আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, আমাদের প্রাইমারি স্কুলের বাচ্চারা যেসব ওয়েবসাইট ফোনে দেখে তাতে তাদের মনে ভোগবাদী সত্ত্বা বসে যাচ্ছে। তাদের নৈতিক সত্ত্বার স্খলন হচ্ছে, তাদের নৈতিক সত্ত্বার বিকাশ হচ্ছে না। তাহলে তারা কেন ধর্ষণ করবে না? তারা কেন মেয়েকে ভোগের বস্তু মনে করবে না, মেয়েরা কেন ছেলেদের ভোগের বস্তু মনে করবে না? আমাদের এসব (ওয়েবসাইট) ফিল্টার করতে হবে। সন্তানদের নিয়ে পিতামাতাদের যে হাহাকার এই সমস্যা আমাদের সলভ করতে হবে। আমাদের এখন জরুরি অবস্থা চলছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে মিডিয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, পরিবার এবং সবার দায়িত্ব আছে। এককভাবে মানসিক স্বাস্থ্য পেশাজীবীরা এই ভয়াবহ অবস্থার প্রতিরোধ করতে পারবে না।’

আত্মহত্যা নিয়ে মেখলা সরকার বলেন, ‘আমাদের এক সার্ভে রিপোর্টে দেখা যায়, হাইলি সুইসাইডাল থট কিন্তু মেয়েদের মধ্যে বেশি। এটা মেয়েদের মধ্যে ৬ শতাংশ আর ছেলেদের ২ দশমিক ৬ শতাংশ। আত্মহত্যা কিন্তু আমাদের জন্য এখন খুবই এলার্মিং বিষয়। আত্মহত্যাকে আমরা অনেক সময় জাস্টিফাই করে থাকি যে— আমাদের জীবনে অনেক ক্রাইসিস চলে, তাই আত্মহত্যার চিন্তা মাথায় আসে। তবে আত্মহত্যার চিন্তা বা এর প্ল্যান করা কিন্তু কোনও স্বাভাবিক ঘটনা না। যখন কেউ এ ধরনের চিন্তা করে তখন কিন্তু সে স্বাভাবিক মানসিক অবস্থায় থাকে না। কারণ আমরা যে জন্মগ্রহণ করি, আমাদের বেঁচে থাকার স্বাভাবিক প্রবণতা আমাদের জিনগতভাবেই আছে। আমরা মনে করি, আমাদের জীবনের যে নানারকমের ক্রাইসিস, নানা রকমের স্ট্রেস এগুলো মোকাবিলা করার আমাদের যে একটা ক্ষমতা ও দক্ষতা থাকে সে ক্ষমতার যখন কমতি হয় আবেগকে যখন আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি তখনই কিন্তু এ ধরনের বিহেভিয়ার বা চিন্তা আমাদের মধ্যে আসতে পারে।’